বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন পৃথিবীর আধুনিক স্থাপত্যশিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি স্থাপনা। বিংশ শতাব্দীর আধুনিক স্থাপত্য রীতির স্থাপত্যসমূহের মধ্যে আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন এক অনন্য নিদর্শন।
সময় তখন পাকিস্থান আমল, তৎকালীন পাকিস্থানের সামরিক সরকার ঢাকার শেরে বাংলা নগরকে দ্বিতীয় রাজধানী বানানোর এবং সেখানে দ্বিতীয় সংসদ ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে । সেই ভাবনা থেকে ১৯৫৯ সালে প্রথম বর্তমান সংসদ ভবন কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা গৃহিত হয়। ১৯৬১ সালে বর্তমান মানিক মিয়া এভিনিউয়ের উত্তর পাশে ২০৮ একর জমি দ্বিতীয় রাজধানী প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৬২ সালে ভবনটির মূল পরিকল্পনা পাস হয়।
মার্কিন স্থপতি লুই আই কান রাজি হলে প্রথমে তাকে খসড়া নকশা প্রনয়ন করতে বলা হয় এবং পরবর্তিতে ১৯৬২ সালের মার্চ মাসে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
ভবনটির চূড়ান্ত নকশা প্রণীত হয় ১৯৬২ সালে এবং নির্মাণ শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। শুরুতে ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা সমস্ত সুবিধাদিসহ ১৯৮২ সালে যখন নির্মাণকাজ শেষ হয় তখন ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে ঠেকে।
১৯৬৪ সালে প্রধান ভবনের কাজ শুরু হলেও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময় নির্মাণাধীন মূল অবকাঠামোর কাজ পুরোপুরি বন্ধ থাকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার চূড়ান্ত নকশায় কোনোরকম পরিবর্তন না এনে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।জাতীয় সংসদ ভবনের নকশায় স্থপতি লুই কান সুর্যের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। তাছাড়া বৃষ্টি প্রতিরোধেও তিনি নকশায় যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে ভবনের বাইরের দিকের ফাসাদে জ্যামিতিক ত্রিভুজ, আয়তক্ষেত্র, সমতল, বৃত্তাংশ আর সম্পূর্ণ বৃত্তাকার খিলানসমূহ ভবনের ভেতরে বাতাসের চলাচলকে করেছে বাঁধাহীন। গতানুগতিক ধারায় জানালা স্থাপনের ব্যবস্থাকে স্থপতি সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেছেন। স্থাপত্যশৈলীতে ভবনটি আধুনিক স্থাপত্যধারার এক অনন্য নজির হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়।
ভবনটির নির্মাণে কোথাও কোনো কলামের ব্যবহার হয়নি, বিশাল স্থাপত্যের অসুবিধা দূর করতে ভবনটিতে বিশাল বিশাল ফাঁক ব্যবহার করা হয়েছে। তবে নকশা কাঠামোর ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে শূন্যস্থানে কোথাও কোথাও ফাঁপা কলাম বসানো হয়েছে। প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহারে কীভাবে পুরো ভবনটি আলোকিত করা যায় তা ছিল কানের নকশার সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ। কমপ্লেক্স এলাকার মধ্যে আছে একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, যাতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন হয়। এছাড়াও আছে হোস্টেল, আবাসিক ভবন ও রাস্তা। ৫০টি সোপান, ৩৪০টি শৌচাগার, ১,৬৩৫টি দরজা, ৩৩৫টি জানালা নিয়ে ভবনটি গঠিত। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি জাস্টিস আব্দুস সাত্তার জাতীয় সংসদ ভবন উদ্বোধন করেন। সেই বছরই ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন গড়ে ওঠা এই ভবনে প্রথমবারের মতো সংসদের অধিবেশন বসে।
লুই আই. কানের নকশায় গড়ে উঠেছে বিখ্যাত সব স্থাপত্য। ৭৩ বছর বয়সী লুই কানের শেষ প্রজেক্ট ছিল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন। ২০০৩ সালে তাকে নিয়ে তার ছেলের নির্মিত একটি ডকুমেন্টারী চলচিত্র ‘My Architect: A Son's Journey’-তে জাতীয় সংসদ ভবনকে ফিচার করা হয়। যে গল্পে কানের ছেলে খুঁজে ফিরেছেন তার বাবাকে, আর অনুভব করতে চেয়েছেন এক মহান শিল্পীর শিল্পকে।
সমসাময়িক স্থাপত্যশিল্পের উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের সংসদ ভবন লুই কানের সর্বশেষ কাজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শেরে বাংলা নগরে। বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা আর বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে ওঠা এই সংসদ ভবন একইসাথে বাংলাদেশের মানুষের জন্যে বয়ে এনেছে সম্মান ও গর্ব।
সময় তখন পাকিস্থান আমল, তৎকালীন পাকিস্থানের সামরিক সরকার ঢাকার শেরে বাংলা নগরকে দ্বিতীয় রাজধানী বানানোর এবং সেখানে দ্বিতীয় সংসদ ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে । সেই ভাবনা থেকে ১৯৫৯ সালে প্রথম বর্তমান সংসদ ভবন কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা গৃহিত হয়। ১৯৬১ সালে বর্তমান মানিক মিয়া এভিনিউয়ের উত্তর পাশে ২০৮ একর জমি দ্বিতীয় রাজধানী প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৬২ সালে ভবনটির মূল পরিকল্পনা পাস হয়।
মার্কিন স্থপতি লুই আই কান রাজি হলে প্রথমে তাকে খসড়া নকশা প্রনয়ন করতে বলা হয় এবং পরবর্তিতে ১৯৬২ সালের মার্চ মাসে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
ভবনটির চূড়ান্ত নকশা প্রণীত হয় ১৯৬২ সালে এবং নির্মাণ শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। শুরুতে ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা সমস্ত সুবিধাদিসহ ১৯৮২ সালে যখন নির্মাণকাজ শেষ হয় তখন ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে ঠেকে।
১৯৬৪ সালে প্রধান ভবনের কাজ শুরু হলেও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময় নির্মাণাধীন মূল অবকাঠামোর কাজ পুরোপুরি বন্ধ থাকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার চূড়ান্ত নকশায় কোনোরকম পরিবর্তন না এনে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।জাতীয় সংসদ ভবনের নকশায় স্থপতি লুই কান সুর্যের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। তাছাড়া বৃষ্টি প্রতিরোধেও তিনি নকশায় যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে ভবনের বাইরের দিকের ফাসাদে জ্যামিতিক ত্রিভুজ, আয়তক্ষেত্র, সমতল, বৃত্তাংশ আর সম্পূর্ণ বৃত্তাকার খিলানসমূহ ভবনের ভেতরে বাতাসের চলাচলকে করেছে বাঁধাহীন। গতানুগতিক ধারায় জানালা স্থাপনের ব্যবস্থাকে স্থপতি সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেছেন। স্থাপত্যশৈলীতে ভবনটি আধুনিক স্থাপত্যধারার এক অনন্য নজির হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়।
ভবনটির নির্মাণে কোথাও কোনো কলামের ব্যবহার হয়নি, বিশাল স্থাপত্যের অসুবিধা দূর করতে ভবনটিতে বিশাল বিশাল ফাঁক ব্যবহার করা হয়েছে। তবে নকশা কাঠামোর ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে শূন্যস্থানে কোথাও কোথাও ফাঁপা কলাম বসানো হয়েছে। প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহারে কীভাবে পুরো ভবনটি আলোকিত করা যায় তা ছিল কানের নকশার সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ। কমপ্লেক্স এলাকার মধ্যে আছে একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, যাতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন হয়। এছাড়াও আছে হোস্টেল, আবাসিক ভবন ও রাস্তা। ৫০টি সোপান, ৩৪০টি শৌচাগার, ১,৬৩৫টি দরজা, ৩৩৫টি জানালা নিয়ে ভবনটি গঠিত। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি জাস্টিস আব্দুস সাত্তার জাতীয় সংসদ ভবন উদ্বোধন করেন। সেই বছরই ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন গড়ে ওঠা এই ভবনে প্রথমবারের মতো সংসদের অধিবেশন বসে।
লুই আই. কানের নকশায় গড়ে উঠেছে বিখ্যাত সব স্থাপত্য। ৭৩ বছর বয়সী লুই কানের শেষ প্রজেক্ট ছিল বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন। ২০০৩ সালে তাকে নিয়ে তার ছেলের নির্মিত একটি ডকুমেন্টারী চলচিত্র ‘My Architect: A Son's Journey’-তে জাতীয় সংসদ ভবনকে ফিচার করা হয়। যে গল্পে কানের ছেলে খুঁজে ফিরেছেন তার বাবাকে, আর অনুভব করতে চেয়েছেন এক মহান শিল্পীর শিল্পকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন